বাংলার এ অংশের সঙ্গে প্রাকৃতিক দুর্যোগ ছিল নিত্যনৈমত্তিক ব্যাপার। ঘুর্ণিঝড়, বন্যা, দুর্ভিক্ষ, অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি, ভূমিকম্পসহ নানাবিধ প্রাকৃতিক দুযোর্গ মোকাবেলা করেই এ অঞ্চলের মানুষকে টিকে থাকতে হত।
প্রাক-মোগল বা মোগল শাসনামলে ঢাকায় সংঘটিত প্রাকৃতিক দুর্যোগের কথা সেভাবে না জানা গেলেও কোম্পানি শাসনামলে ঢাকায় ঘটে যাওয়া কয়েকটি প্রাকৃতিক বিপর্যয় ও এর ফলে সৃষ্ট মন্বান্তর সম্পর্কে কিছু কিছু তথ্য জানা যায়।
সমৃদ্ধ ঢাকায় বার বার আঘাত হেনেছে মন্বন্তর, দুর্ভিক্ষসহ নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগ। এই মন্বন্তর-দুর্ভিক্ষ কেন ঘটেছিল এই প্রশ্নটি অতি সাধারণ। ঘটনা বিশ্লেষণে এইসব দুর্যোগ শুধু প্রাকৃতিক দুর্যোগ বলে উড়িয়ে দেয়ার কোনো উপায় নেই। অধিকন্তু এটির কারণ হিসেবে মোগল শাসন ও ইংরেজ শাসনকেই দায়ী করেছেন অনেক ইতহাস গবেষক।
মোগল শাসনের শেষের দিকে দিল্লির রাজকোষে নির্দিষ্ট অর্থ পাঠানো হবে, এই শর্তে বাংলার ক্ষমতা দেয়া হত নায়েব নাজিমদেরকে। তারা ঢাকাকে ফাকা করে এই অর্থ আদায় করে পাঠাতো দিল্লির মসনদে।
আর ইংরেজ শাসনামলের তো কথাই নেই। ইংরেজ কর্মচারিদের লুটপাটের স্বর্গরাজ্য ছিল ঢাকা। এই অযাচিত লুটপাট ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ এই দুই মিলে ঢাকায় ঘটে যায় ইতিহাসের অন্যতম বেশ কয়েকটি মন্বন্তর।
যদিও শাসকবর্গ কখনো তা স্বীকার করেনি। ঢাকায় আঠার সতকের প্রথমার্ধে দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। পরবর্তী ১৭৬৯ সালে মহা-দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়।
এই সকল দুর্যোগ মহামারির আকার নেয় বেশ কয়েকবার। বহু মানুষ মারা যাওয়ার খবরও পাওয়া যায় তৎকালীন সংবাদপত্র ও নথিপত্রে। এছাড়া ভূমিকম্পেও এ শহরে বড় বড় ইমারত ভেঙ্গে পরার সংবাদও পাওয়া যায়। নবাব বাড়িসহ শহরের অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয় এসব ভূমিকম্পে।
টনের্ডোর আঘাতে ১৮৮৮ সালে ভেঙ্গে পরে শহরের বহু প্রাচীন দালানকোঠা। এছাড়া অতিবৃষ্টি-অনাবৃষ্টি-বন্যার প্রভাব তো ছিলই।